আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার অনৈতিক ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে বাধা দেওয়ায় মায়ের প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ।
তুরিন আফরোজের মা, সামসুন নাহার তাসলিম, অভিযোগ করেছেন— মেয়ের কর্মকাণ্ডে প্রতিবাদ জানানোয় তিনি দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তুরিন তার বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অপপ্রচার চালিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। সামসুন নাহার জানান, “আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত না, তবুও তুরিন আমাকে জামায়াত রুকন আখ্যা দিয়ে অপবাদ ছড়িয়েছে। এই অপপ্রচারের সুযোগ নিয়ে আমাকে উত্তরার বাসা থেকে জোর করে বের করে দেয়।”
তাসলিম আরও বলেন, “রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে আমাকে ভয় দেখানো হয়েছে। থানায় জিডি করতে গিয়েও জিডি নেয়নি। ২০২৩ সালে সংবাদ সম্মেলনের পর থেকে তুরিনের হাতে লাগাতার নির্যাতনের শিকার হয়েছি।”
ডিএমপি উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মো. মহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত ২৭ মার্চ উত্তরায় দায়ের হওয়া একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তুরিন আফরোজ এজাহারভুক্ত আসামি। নজরদারির পর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে, নীলফামারিতেও তুরিনের নামে একাধিক মামলা রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন তুরিন। তিনি যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমসহ বেশ কয়েকটি আলোচিত মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী ছিলেন। তবে ২০১৯ সালের নভেম্বরে যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপন বৈঠকের অভিযোগে তাকে পদচ্যুত করা হয়।
সরকার পরিবর্তনের পর দেশের রাজনৈতিক চিত্র নাটকীয়ভাবে বদলে যায়। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হয় এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর পরপরই শুরু হয় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার। সেই ধারাবাহিকতায় এবার গ্রেপ্তার হলেন ক্ষমতাসীন সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।