মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলায় আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে ধর্ম, বর্ণ বা সংখ্যাগরিষ্ঠ-সংখ্যালঘু বিভাজন থাকবে না। যতদিন এ দেশে ন্যায়বিচার ও মানবিক আইন প্রতিষ্ঠিত না হবে, আমাদের সংগ্রাম চলবে।”ঈদুল ফিতরের পরদিন মঙ্গলবার কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের উদ্যোগে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কুলাউড়ার প্রতি আবেগপূর্ণ স্মৃতিচারণ:
কুলাউড়ার সন্তান হিসেবে নিজের জন্মস্থানের প্রতি আবেগ প্রকাশ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “দীর্ঘ ২৪ বছর পর আপনাদের সামনে কথা বলার সুযোগ পেলাম। রাজনৈতিক দুঃশাসন ও জুলুমের কারণে এতদিন আপনাদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হয়েছে। আজ প্রাণ খুলে আপনাদের দেখতে চাই।”
তিনি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “যুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল মাত্র সাড়ে ১২ বছর। এই বয়সে কি কেউ যুদ্ধাপরাধ করতে পারে? তবুও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ আমার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়নি, এমনকি হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইয়েরাও না। কারণ, সত্যকে আড়াল করা যায় না।”
জালিম সরকারের অত্যাচারের স্মৃতি:
জামায়াত আমির অভিযোগ করেন, “বিগত সরকার আমাদের ১১ জন শীর্ষ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে, ৫ শতাধিক কর্মী পঙ্গু হয়েছে এবং হাজার হাজার নেতা-কর্মী দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। আমাদের রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে, অন্যায় কখনো স্থায়ী হয় না।”
তিনি আরও বলেন, “শুধু আওয়ামী লীগের নেতারা ২৬ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। প্রশাসনের দুর্নীতি এর চেয়েও বেশি হতে পারে। তারা নিজেদের রাজা ভেবেছে আর আমাদের প্রজা। কিন্তু জনগণ বুঝিয়ে দিয়েছে, ক্ষমতার আসল মালিক কারা।”
মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন:
কুলাউড়ার চা-শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “এখানে ৩৪টি চা বাগান রয়েছে, যেখানে শ্রমিকরা হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেন। তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা শুধু ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আইনজীবী চাই না, আমরা চাই প্রকৃত মানুষ, যারা মানবতার কল্যাণে কাজ করবেন।”
শহীদ পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমি যদি প্রত্যেক শহীদের বাড়িতে যেতে পারতাম, তাদের সন্তানদের কোলে নিতে পারতাম, তবে আমার মন কিছুটা শান্তি পেত। শহীদ পরিবারগুলোর একটাই চাওয়া—জালিমদের হাত থেকে দেশ রক্ষা করা।”
আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি। কুলাউড়াবাসীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বলেন, “আপনারাও কি চান না, এই দেশ চাঁদাবাজ, ঘুষখোর ও সুদখোরদের কবল থেকে মুক্ত হোক? যদি চান, তাহলে আমাদের লড়াই কেবল শুরু। যতদিন এই দেশে আল্লাহর আইন, মানবিকতা ও ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত না হয়, আমাদের লড়াই চলবে।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “বাংলাদেশ যেমন জালিমদের হাত থেকে মুক্ত হয়েছে, ঠিক তেমনই ফিলিস্তিনও একদিন মুক্তি পাবে।”
উপজেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আব্দুল মুন্তাজিমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বেলালের পরিচালনায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম।